কাল্পনিক জগতে আমরা সুখকে ছুয়ে দেখার রহস্য বের করতে গিয়েও ব্যর্থ হয়! সপ্নে নিজের কাঙ্খিত জিনিসটি কাছ থেকে অনুভব করেও আধএকটু বুঝতেই পারি এটা বাস্তব নাহ্! ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই উপলব্ধি করি যে সত্যিকার অর্থেই সপ্ন ই দেখছিলাম। আচ্ছা যদি এমন হয় যে, বাস্তবেই আপনি কাঙ্খিত মুহুর্তটি অনুভব করছেন? এইযে ধরুন আপনার প্রিয় মানুষটির মৃত্যুর বহুবছর পরও আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন।
সাম্প্রতিক ২০২০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি এমনই ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ১৩মিলিয়ন মানুষ! সাউথ কোরিয়ায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে এক মা তার ২০১৬ সালে মৃত মেয়ের সাথে কথোপকথন করেছে,লুকোচুরি খেলেছে, জন্মদিনের কেক কেটেছে! অবাস্তব মনে হলেও ৯ মিনিটের ভিডিও ক্লিপটি দেখে বিস্মিত চোখের পানি আটকে রাখতে পারেনি কেউ। এখন আপনি হয়ত ভাবছেন এটা কেমনে সম্ভব! আসলেও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি?
Online Business Ideas in Bangladesh
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছেভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা সিমুলেটেড এনভায়রোমেন্ট মলুত কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে তৈরী কৃত্রিম 3D পরিবেশ, যা বাস্তবিক অভিজ্ঞতার অনুভুুতি র যোগান দেয়। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়ারের মাধ্যমে তৈরী এই কৃত্রিম পরিবেশটিতে ইউজার বিভিন্ন ডিভাইস যেমন হেলমেট, গোগলস
দ্বারা সহজেই পরিবেশে নিজেকে বাস্তবিকভাবে আবিষ্কার করে ।
বিজ্ঞান ইতোমধ্যেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহারকে সহজলভ্য করেছে , যাতে মানুষ কল্পনার জগৎকে সত্যিকার অর্থেই তার ইন্দ্রীয় অনভুুতি দ্বারা বাস্তবে পরিনত করতে পারে । কল্পনা ও বাস্তবকে ভিন্ন
নজরে দেখার এই বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবন কি আসলেই অভিনব নাকি যান্ত্রিকতার ভিড়ে চোখের ফাঁকি? চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? জেনে নিন ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রধান কাজ, বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, সুবিধা এবং অসুবিধা!
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি(VR) এমন এক টেকনোলজী যার মাধ্যমে ভার্চুয়াল জগতের ঘটনা বা দৃশ্যপটগুলো পরিপুর্ন জীবন্ত মনে হয়! পাশ্ববর্তী সকল উপাদানসমুহের সাথে ইউজার প্রকৃত অর্থে ইন্টারেক্ট করবে যা সম্পুর্ন Graphics এবং 3D প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরী ছবি অথবা ভিডিও! তবে, ছবি বা ইমেজগুলো কিভাবে এত বাস্তবিক দেখায়? প্রশ্ন জাগতেই পারে। আসলে, কম্পিউটার ভিশন ও অত্যাধুনিক গ্রাফিক্স ব্যবহার করে অধিক গভীরতা বা depth দিয়ে 3D ছবি বা ভিডিওগুলো তৈরী করা হয় এবং সাথে ভার্চুয়াল টেকনোলজী স্থির 2D ছবিগুলোর মাঝে একটি নির্দিষ্ট দুরত্ব বা ব্যবধান তৈরি করে। এতে ইউজার বিভিন্ন সেন্সরের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশের মতই দৃশ্যপটের অনুভুতি পায়!
যেহেতু সাম্প্রতিক একটি ঘটনা সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে যা পুরোপুরি মর্ডান ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ! তাই সাউথ কোরিয়ায় মৃত মেয়ের সাথে মায়ের দেখা করার ঘটনা দিয়েই আমরা দেখব ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আসলে কিভাবে কাজ করে!
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ধারনা : ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যেভাবে কাজ করে
প্রথমত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রজেক্টররা মৃত মেয়ে Nayeon এর ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ শুরু করে। এক্ষেত্রে নাইয়েওনের পুরানো ছবি,ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষন করে এক্সপার্টরা তার হাসি, ভয়েস, কথাবার্তা, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, অভ্যাস এসবের একটি ডাটা রেডি করেন।
এরপর, তার সমবয়সী কিছু বাচ্চাদের থেকে সবচেয়ে মিল হওয়া ভয়েস দিয়ে নাইওয়নের ভয়েস রিক্রিয়েট করে।
দ্বিতীয়ত, তার সমবয়সী বাচ্চার হাইটের সাথে মিল রেখে কম্পিউটার ভিশন ও মর্ডান গ্রাফিক্সের সাহায্যে সম্পুর্ন নাইওয়নের মত দেখতে ভার্চুয়াল 3D ছবি ক্রিয়েট করে।
Read Another post: ফেসবুক আইডি খোলার নিয়ম
পরবর্তীতে, একজন ডাইরেক্টর নাইয়েওনের পুরোনো ছবির পোস, ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন, ভিডিও ইত্যাদি রিক্রিয়েট করতে এক সমবয়সী বাচ্চাকে অভিনয় করিয়ে নেয়। যা সম্পুর্ন সেন্সর ও প্রযুক্তির মাধ্যমে পুর্বের নাইওয়েনের ভার্চুয়াল প্রতিবিম্বের ভিডিওতেও তৎক্ষনাৎ এড হয়। অর্থাৎ, সমবয়সী মেয়েটি যখন হাটছিল, কথা বলছিল তখন সেন্সর ও ডিভাইসের সংযোগের কারনে একই এক্টিভিটি নাইয়েওনের কৃত্রিম অবয়বটিও গ্রাফিক্সের সাহায্য করছিল। মুলত, এক্টিভিটি রেকডিং করানোর জন্যই এই ব্যবস্থাটি করা হয়েছিল।
পরিশেষে টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে এক্সপার্টরা ভার্চুয়াল নাইয়েওন বানাতে সক্ষম হয়।
এবার ভার্চুয়াল রিয়েলিটি প্রজেক্ট সাকসেসফুল করাটার মাঝেই রয়েছে বিশেষ চমক।
নাইয়েওন এর মাকে একটি গ্রিন স্টুডিও এর মধ্যে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে VR headset( ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট), টাচ সেনসিটিভ গ্লাভস পরিধান করতে হয়। এবার রীতিমত VR headset টিতে ৩৬০° প্রিরেকডেড ভিডিওটি চালু করা হয় এবং গ্রাফিক্সের সাহায্যে পরিবেশটির ছবিও ইনক্লুড করা হয়। এতে নাইয়েওনের মা পুরোপুরি ভার্চুয়াল জগতকে ঘুরে দেখতে ও ভার্চুয়াল নাইয়েওনকে স্বয়ংপুর্ন নিজের মেয়ে হিসেবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়। এককথায়, এভাবেই মৃত নাইয়েওনের সাথে তার মা ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে একত্রিত হয়।
আশা করি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পুর্ন কনসেপ্ট বুঝতে আপনাদের সহজ হয়েছে। এবার চলুন একে একে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির টুলস, প্রকারভেদ, সুবিধা এবং অসুবিধা গুলোও জেনে নেয়া যাক।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইস(VR device)
- ইনপুট ডিভাইস(Input Device)
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কন্ট্রোলারস, ট্র্যাকিল বল, ডাটা গ্লাভস, ট্র্যাকপ্যাডস, বডিস্যুটস, মোশন ট্র্যাকার এবং অন্যান্য!
- আউটপুট ডিভাইস (Output Device)
- হেড-মাউন্টেড ডিসপ্লে অথবা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হেডসেট
- অডিও ডিভাইস
- ইমার্সিভ রুম
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রকারভেদ
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি মুলত সাধারনত পাঁচ ধরনের!
- Fully-immersive Virtual Reality
- Semi-immersive Virtual Reality
- Non-immersive Virtual Reality
- Augmented Reality
- Collaborative Virtual Reality.
নিম্নে প্রধান ৩টি ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সম্পর্কে আলোচনা করে। সহজেই পরিপূর্ণ ধারনা লাভে সংক্ষিপ্ত চার্টটি নিম্নে যোগ করা হলো।
ধরন | ব্যবহৃত টুলস | কাজ/ বৈশিষ্ট্য |
Fully-immersive Virtual Reality | টেকনিক্যাল হেলমেট, গ্লাভস, বডি কানেক্টরস | সম্পুর্ন নিজেকে ভার্চুয়াল জগতে আবিষ্কার করতে পারবেন। কারন এতে সেন্সর দিয়ে আপনার শারীরিক অঙ্গিভঙ্গিও রেকর্ড করে ভার্চুয়াল পরিবেশে এড করা হয়। ফলে আপনি ইন্দ্রিয় অনুভুতি দ্বারা ভার্চুয়াল জগতের সবকিছু বাস্তব ভাবতে বাধ্য হবেন। |
Semi-immersive Virtual Reality | ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বক্স এবং হ্যান্ডসেট | আপনাকে Fully immersive and Non-immersive এর মাঝামাঝি পর্যায়ের অভিজ্ঞতার সুযোগ দিবে। এক্ষেত্রে আপনি ভার্চুয়াল জগতের সাথে কানেক্টেড থাকার পাশাপাশি বাস্তবে নিজের অবস্থান ও উপলব্ধি করতে পারবেন। অর্থাৎ এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার শারীরিক বিচরনের অনুভুতি সেন্সর দ্বারা নিয়ন্ত্রণ হবেনা। |
Non-immersive Virtual Reality | কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাব অথবা স্মার্টফোন | এক্ষেত্রে আপনি ভার্চুয়াল জগতের ক্যারেক্টরগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন তবে সরাসরি যুক্ত হবেন না! আপনার সাথে ভার্চুয়াল জগতের উপাদানগুলোর সাথে ইন্টারেকশন নেই। যেমন: গ্যামিং |
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগ
বিজ্ঞানের নতুন প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে তো অনেক জানলাম। তবে এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের কোন কোন ক্ষেত্রবিশেষে কাজে লাগে তাও উপলব্ধি করা দরকার।
১. শিক্ষাক্ষেত্র
২. ই-লার্নিং
২.চিকিৎসা ক্ষেত্র
৩. ট্রেনিং
- মিলিটারি ট্রেনিং
- আর্মি ট্রেনিং
- কার ড্রাইভিং ও অন্যান্য
৪. গেইমিং
৫. এন্টারটেইনমেন্ট
৬.আর্কিটেকচার
৭. অফিসিয়াল মিটিং
মুলত, বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিষ্কারের সুবিধা এবং অসুবিধা দুইটি ই দৃশ্যমান হয়। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসায় উন্নতির দুয়ার খুলে যাচ্ছে। একদিকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি যখন মানুষকে অসাধ্য সাধনে আস্তা দিচ্ছে, তেমনি মানুষকে বাস্তব থেকেও কল্পনার জগতে মিথ্যা সুখ ছিনিয়ে নেওয়ার সপ্ন ও দেখানো হচ্ছে। অবাস্তবকে বাস্তব হিসেবে কল্পনা করা একপ্রকার চোখ ফাকি ছাড়া কিছুই নয়। এছাড়া, হাতের মুঠোই সকল সাফল্য এসে গেলে মানুষ সাফল্যের সংজ্ঞা ভুলেই যাওয়াই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত ভার্চুয়াল জগতকে আপন করে নিলে মানুষ হয়ে পড়বে সবথেকে অকেজো ও অলস। চিন্তাশক্তি, বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়ারও সম্ভাবনা অত্যাধিক।
তবুও বলা বাহুল্য, লিমিটেশনগুলো পরিহার করে ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঠি ব্যবহার করাটাই লাভজনক। আশা করছি, একজন বিগেইনার হিসেবে আপনি সহজেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নিয়ে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলটি পড়ে নিজের অনুভুতি জানাতে ভুলবেন না। আসসালামু আলাইকুম।