ব্লগ পোস্ট

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ 2024

Raqib4you

No Comments

প্রাতিষ্ঠানিক, সংবাদ প্রতিবেদন, তদন্ত প্রতিবেদন বা যেকোনো প্রতিবেদন লেখার নিয়ম কানুন উদাহরণ সহ

প্রতিবেদন শব্দটি আমরা প্রতিনিয়তই শুনে থাকি। বিশেষ করে যারা নিয়মিত সংবাদপত্র পড়েন, তাদের কাছে এটি একটি পরিচিত শব্দ। শুধু সংবাদপত্রই বা বলছি কেন, যারা শিক্ষার্থী কিংবা বিভিন্ন চাকুরীতে কর্মরত রয়েছেন, তাদেরও অনেক সময় পরীক্ষার খাতায় কিংবা অফিসের কাজে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। তবে অনেকেই রয়েছেন যারা সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে অবগত নন। একারণে তারা প্রতিবেদন লিখতে গেলে অনেক রকম ভুল করে থাকেন। কিভাবে প্রতিবেদন লিখতে হয় সেটি নিয়ে এখন থেকে আর চিন্তা করতে হবেনা। কারণ, আজকের লেখায় আমি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো প্রতিবেদন কি, প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য, প্রকারভেদ, সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম, প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।

প্রতিবেদন কাকে বলে বা প্রতিবেদন কি?

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ভালোমতো বোঝার জন্য শুরুতেই প্রতিবেদন কি সেটি জানা থাকা প্রয়োজন। প্রতিবেদনকে ইংরেজিতে রিপোর্ট বলা হয়। খুব সহজ করে বলতে গেলে, প্রতিবেদন হচ্ছে কোনো একটি ঘটনা কিংবা বিষয় সম্পর্কে তথ্য এবং অনুসন্ধানের বিস্তারিত বর্ণনা। প্রতিবেদন তৈরি করার কাজটি যিনি করেন তাকে প্রতিবেদক বলা হয়। একজন প্রতিবেদক কোনো প্রতিবেদন তৈরি করার পর সেটি নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন।

একটি প্রতিবেদনে সাধারণত যেকোনো ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্যের পাশাপাশি উপাত্ত, মতামত, ওই ঘটনার প্রভাব ইত্যাদিও উল্লেখ করা হয়। সুতরাং বলা যেতে পারে, প্রতিটি প্রতিবেদন যথেষ্ট রিসার্চ বা অনুসন্ধানের পর তৈরি করতে হয়, যাতে করে যারা প্রতিবেদনটি পড়বেন, তারা প্রতিবেদনের ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়ে যান।

এছাড়াও আরো জেনে রাখা ভালো, প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্যগুলোতে মিথ্যার বা পক্ষপাতীত্বের কোনো স্থান নেই। বরং সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ জায়গা থেকে সঠিক তথ্য দিয়ে একেকটি প্রতিবেদন রচনা করতে হয়, যাতে করে সেই প্রতিবেদন পড়লে কেউ বিভ্রান্ত বোধ না করেন৷ এর পাশাপাশি প্রতিটি প্রতিবেদন লেখার সময় সহজ ভাষা অনুসরণ করা হয়, যেন প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু বুঝতে কারো সামান্যতম অসুবিধাও না হয়।

প্রতিবেদন কি তা বোঝার জন্য একটি উদাহরণ দেই। ধরুন, বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে আপনার এলাকায় একটি আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো। এখন প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে জেনে সেই অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি বিবরণ যদি কেউ লিখে পত্রিকায় পাঠান এবং সেটি যদি ছাপা হয়, তাহলে সেই লেখাটিকে একটি প্রতিবেদন বলা যেতে পারে। আশা করি প্রতিবেদন কি তা বুঝতে পেরেছেন।

প্রতিবেদন কত প্রকার ও কি কি

প্রতিবেদন কি তা জানার পর স্বাভাবিকভাবেই আপনাদের মনে প্রশ্ন আসবে যে প্রতিবেদন কত প্রকার ও কি কি? এই প্রকারভেদ গুলো জানা থাকলে আপনারা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম জেনে খুব সহজেই এগুলো লিখতে পারবেন। তাই এবার জানাবো প্রতিবেদনের প্রকারভেদ নিয়ে।

১।সংবাদ প্রতিবেদন কি

যেকোনো সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য যে প্রতিবেদন লেখা হয়ে থাকে, সেটিকেই সংবাদ প্রতিবেদন বলা হয়। সংবাদ প্রতিবেদন এর মূল উদ্দেশ্য যেকোনো বিষয় বা সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে পাঠকদের অবগত করা। যেকোনো ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনকেও আমরা সংবাদ প্রতিবেদন বলতে পারি।

উদাহরণঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের পহেলা বৈশাখ উদযাপন সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

২। তদন্ত প্রতিবেদন কি

আমাদের চারপাশে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা কিংবা দুর্ঘটনার সত্যতা বা গভীরতা কতটুকু তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে যে প্রতিবেদন লেখা হয়, সেটিকে তদন্ত প্রতিবেদন বলে। সংবাদ প্রতিবেদন এর সাথে তদন্ত প্রতিবেদনের মূল পার্থক্য হচ্ছে তদন্ত প্রতিবেদনের প্রকৃতি তুলনামূলক বেশি অনুসন্ধানী হয়ে থাকে। এই প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও কিছুটা ভিন্নই বটে।

উদাহরণঃ আমাদের দেশে ভুয়া কসমেটিকস আইটেম বানানো হয় কিনা সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন।

৩। গবেষণা ভিত্তিক প্রতিবেদন কি

কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা করার পর বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত এবং জরিপের আলোকে যে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়, সেটিকেই গবেষণাভিত্তিক প্রতিবেদন বলে। এই ধরনের প্রতিবেদন তৈরি করতে সময় ও পরিশ্রম দুটিই অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

উদাহরণঃ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলেছে তা সম্পর্কিত প্রতিবেদন।

৪। দাপ্তরিক প্রতিবেদন কি

একটি প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে প্রতিবেদনগুলো লেখা হয়ে থাকে, সেগুলোকে মূলত দাপ্তরিক প্রতিবেদন বলা হয়ে থাকে। দাপ্তরিক প্রতিবেদনের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি একটি প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক প্রতিবেদন। সেই হিসেবে এক একটি প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক প্রতিবেদন একেক রকম হয়ে থাকে।

দাপ্তরিক প্রতিবেদনকে আবার প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন এ দুটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম হলো এই প্রতিবেদনে কোনো প্রতিষ্ঠানের একটি বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ ও খুঁটিনাটি তথ্য উল্লেখ করা হয়। এ কারণে এ প্রতিবেদনগুলোর আকার সাধারণত বেশ বড় হয়ে থাকে।

অন্যদিকে অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদনে একটি প্রতিষ্ঠানের ছোট কোনো পরিবর্তন, কোনো অনুষ্ঠান বা ইভেন্ট সম্পর্কে লেখা হয়ে থাকে। এ কারণে এ প্রতিবেদনগুলোর আকার বেশ ছোট হয়।

উদাহরণঃ কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিগত এক বছরের উন্নতি সম্পর্কে লেখা প্রতিবেদন।

৫। প্রস্তাবনা প্রতিবেদন কি

প্রস্তাবনা প্রতিবেদন হচ্ছে সেই প্রতিবেদন যেটি কোনো সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে লেখা হয়ে থাকে। অর্থাৎ প্রস্তাবনা প্রতিবেদন তখনই বানানো হয়ে থাকে, যখন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয়। এই প্রতিবেদনে যে সমস্যাটি সমাধান করা প্রয়োজন সেটি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে লেখা হয় যাতে করে কর্তৃপক্ষ যত দ্রুত সম্ভব সেই সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে পারে।

উদাহরণঃ এলাকার রাস্তা পরিষ্কারের জন্য সিটি কর্পোরেশনের কাছে লেখা প্রতিবেদন।

প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য

প্রতিবেদন এর প্রকারভেদ ও প্রতিবেদন কি এই সম্পর্কে জেনে নিলেন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে।

১৷ যেকোনো প্রতিবেদনের ভাষা সহজ ও সবাই যেন বুঝতে পারে সেরকম হওয়া আবশ্যক। অর্থাৎ যথাসম্ভব প্রাঞ্জল ভাষায় প্রতিটি প্রতিবেদন লিখতে হয়। কেননা, প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে কোনো বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানানো। এ কারণেই দুর্বোধ্য ব্যাকরণ ও ভাষার সাহায্যে প্রতিবেদন লেখা যাবে না।

২। নির্দিষ্ট কাঠামো ও প্রতিবেদন লেখার নিয়ম অনুসরণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। আপনি চাইলেই ইচ্ছামতো যেকোনো একটি কাঠামো অনুসরণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাতে পারবেন না। যেমনঃ আপনি যদি সংবাদ প্রতিবেদন হিসেবে কোনো রকমে একটি অনুচ্ছেদ লিখে পাঠান, তাহলে সেটি কখনোই ছাপা হবে না, কারণ আপনি সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম অনুসরণই করেননি।

৩। যিনি প্রতিবেদন তৈরি করবেন তাকে সবসময় নিরপেক্ষতার নীতি অবলম্বন করতে হবে। সবসময় মনে রাখতে হবে, যে বিষয়েই প্রতিবেদন তৈরি করুন না কেন, আপনি পক্ষে কিংবা বিপক্ষে কোনো দিকেই অবস্থান করতে পারবেন না।

আরো জানুন: মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে

অর্থাৎ একটি প্রতিবেদনে কখনোই নিজের আবেগ- অনুভূতি কিংবা আদর্শ আসতে দেওয়া যাবেনা। বরং নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে। এতে করে প্রতিবেদনের গ্রহণযোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়।

৪। প্রতিবেদনে যেসব বিষয়বস্তু তুলে ধরা হবে ,সেগুলোকে ছোট ছোট অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ভাগ করে উপস্থাপন করতে হবে। একইসাথে এটিও খেয়াল রাখতে হবে যেন পূর্ববর্তী অনুচ্ছেদের সাথে পরবর্তী অনুচ্ছেদের সাদৃশ্য বজায় থাকে৷ এতে করে পাঠকদের নজর প্রতিবেদন থেকে সরবে না।

৫৷ প্রতিবেদনের ধরনের ওপর ভিত্তি করে এটির আকার যেন ঠিক থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে একটি বিষয় সবার জেনে রাখা উচিত। সেটি হলো প্রতিবেদনের আকার বাড়ানোর জন্য কোনো রকম অবান্তর আলোচনা প্রতিবেদনে করা যাবে না। বরং সবসময় প্রতিবেদনের যে বিষয় সেটির ওপরেই আলোকপাত করতে হবে।

৬। প্রতিবেদনে কখনোই সত্য নয় এমন কোনো তথ্য প্রদান করা যাবে না। সবসময় মনে রাখতে হবে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয় কোনো বিষয় সম্পর্কে মানুষকে সঠিক ধারণা দেয়ার জন্য। এ কারণে কোনো প্রতিবেদন তৈরির আগে যথেষ্ট পরিমাণ রিসার্চ করে নিতে হবে, যাতে করে প্রতিবেদনের সত্যতা নিয়ে পাঠক কিংবা কর্তৃপক্ষের মনে কোন সন্দেহের অবকাশ না থাকে।

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

এবার আসা যাক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কিত আলোচনায়। সাধারণত প্রতিবেদনের ধরন অনুযায়ী প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ভিন্ন হয়ে থাকে। তবে সব প্রতিবেদনেই একটি সাধারণ স্ট্রাকচার বা কাঠামো ফলো করতে হয়। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক প্রতিবেদনের সাধারণ কাঠামো সম্পর্কে।

১। শিরোনাম
একটি প্রতিবেদন পাঠকরা পড়বেন কিনা কিংবা কতৃপক্ষের দৃষ্টি যথাযথভাবে আকর্ষিত হবে কিনা, তা নির্ভর করে প্রতিবেদনের শিরোনামের ওপর। প্রতিবেদনের শিরোনাম এমন হতে হবে যাতে করে সেটি খুব বেশি ছোট না হয়, আবার বড়ও না হয় এবং একইসাথে যেন এটির মাধ্যমে প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু পরিষ্কারভাবে বোঝা যায়।

২। ভূমিকা
প্রতিবেদনের ভূমিকা অংশটির উদ্দেশ্য হলো যিনি প্রতিবেদনটি পড়বেন তাকে প্রতিবেদনটির আসল বিষয়বস্তু সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা প্রদান করা। সাধারণত প্রতিবেদনের ভূমিকায় প্রতিবেদনটি সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য প্রদান করা হয় না।
বরং সবার বোধগম্য সহজ ভাষায় এমনভাবে তথ্য প্রদান করা হয় যাতে করে পাঠক পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

৩। মূল অংশ
যেকোনো প্রতিবেদনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো এটির মূল অংশ। মূল অংশে যে বিষয় নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করছেন সে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য, উপাত্ত, মতামত ইত্যাদি উল্লেখ করতে হয়।

প্রতিবেদনটির এ অংশ কিভাবে লিখবেন তা প্রতিবেদনের ধরনের ওপর নির্ভরশীল। যেমনঃ যদি কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় সম্পর্কে প্রতিবেদন লিখে থাকেন, তাহলে সে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সাধারণ কিছু তথ্য উল্লেখ করার পর সে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হয়।

আবার যদি কোনো সমস্যা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেন, তাহলে সে সমস্যার কারণ এবং প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার পাশাপাশি এ সমস্যা সমাধানে কি করা যেতে পারে সে সম্পর্কে নিজের পরামর্শ তুলে ধরতে পারেন।

এটি হলো প্রতিটি প্রতিবেদনের সাধারণ কাঠামো যা প্রতিবেদন লেখার নিয়ম হিসেবে সবার জানা থাকা প্রয়োজন। ওপরে উল্লেখ করা বিষয়গুলো ছাড়াও প্রতিটি প্রতিবেদনেই প্রতিবেদকের নাম, ঠিকানা, প্রতিবেদন তৈরির সময়, স্থান ইত্যাদিও উল্লেখ করতে হয়, যাতে করে যারা প্রতিবেদন পড়বেন তারা বুঝতে পারবেন এ প্রতিবেদনটি কার থেকে এসেছে।

এবার আমি আপনাদের সবার সুবিধার জন্য কয়েকটি প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে আলাদাভাবে আলোচনা করবো।

সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

অন্যান্য প্রতিবেদনের চাইতে সংবাদ প্রতিবেদন লেখার নিয়ম বেশ সহজ। এই ধরনের প্রতিবেদনের ক্ষেত্রে একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম বেশ গুরুত্ব বহন করে। কারণ যখন শিরোনাম আকর্ষণীয় হয়, তখনই পাঠকরা অন্যসব প্রতিবেদন না পড়ে আপনার লেখা প্রতিবেদনটি পড়ে দেখবেন।

তাই কয়েকটি শব্দের মধ্যে একটি আকর্ষণীয় শিরোনাম তৈরি করার চেষ্টা করুন। সংবাদপত্র প্রতিবেদনে শিরোনাম লেখার পরে প্রতিবেদকের নাম এবং স্থান- তারিখ এসব বিষয় উল্লেখ করতে হয়।

Read More: What Is Software In Bangla

তার পরেই আসে প্রতিবেদনের ভূমিকা। সংবাদপত্র প্রতিবেদনের ভূমিকাটি এমন হতে হবে যাতে করে সেটি পড়ার পর পাঠকরা পুরো প্রতিবেদনটি পড়ে দেখার আগ্রহ বোধ করেন। এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো ভূমিকায় সহজ করে প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে পাঠকদেরকে প্রাথমিক ধারনা দেয়ার চেষ্টা করুন।

ভূমিকা লেখার পর প্রতিবেদনের যে বিষয়বস্তু সেটি সম্পর্কে ছোট ছোট অনুচ্ছেদ আকারে বিস্তারিতভাবে তথ্য উপাত্ত তুলে ধরুন। যেমনঃ যদি কোনো অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রতিবেদন লেখেন, তাহলে সেই অনুষ্ঠানের বর্ণনা সহ খুঁটিনাটি সব তথ্য উপস্থাপন করুন৷

আবার ধরুন, যদি কোনো স্থানে ঘটা দুর্ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন লেখেন, তাহলে সে দুর্ঘটনার কারণ, সময় স্থান এবং দুর্ঘটনায় কতজন মানুষের কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ইত্যাদি বিষয়ও উল্লেখ করুন। এটি মূলত সংবাদপত্রে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম।

উদাহরণঃ
প্রতিবেদনের শিরোনামঃ
প্রতিবেদকের নামঃ
স্থান ও তারিখঃ

(প্রতিবেদনের ভূমিকা ও মূল অংশ)

 তদন্ত প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

আপনারা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন যে তদন্ত প্রতিবেদন সাধারণত কোনো ঘটনার সত্যতা যাচাই কিংবা কোনো দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য লেখা হয়ে থাকে।

সাধারণত এই প্রতিবেদন একজন মানুষ কিংবা একটি তদন্তকারী দলের মাধ্যমে লেখা হয়ে থাকে এবং লেখার পর এ প্রতিবেদন কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়ে থাকে। তাই এটি লেখার নিয়ম হিসেবে বলা যেতে পারে এই প্রতিবেদনের শুরুতেই প্রতিবেদনটি কারা তৈরি করেছেন এবং এটি কাদের কাছে পাঠানো হবে সেটি শুরুতেই উল্লেখ করতে হয়।

তারপর যে ঘটনাটি নিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে সেই ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ দিতে হয়। তারপর সে ঘটনাটির পেছনে থাকা কারণগুলো লেখা হয়৷ একইসাথে এ ঘটনাটি বন্ধ করা বা এড়ানোর জন্য কি কি সর্তকতা সুপারিশ করা যেতে পারে সেগুলোও বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়।

উদাহরণঃ
তারিখঃ
কর্তৃপক্ষের পরিচয় (পদবি, প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা)
বিষয়ঃ

জনাব,
(এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে হবে)

প্রতিবেদকের নামঃ
ঠিকানাঃ

প্রতিবেদনের শিরোনামঃ

মূল বিবরণঃ
(এখানে সমস্যার বিবরণ, সমস্যার পেছনের কারণ ও এর প্রতিকারে কি করা যেতে পারে তা উল্লেখ করতে হবে)

দাপ্তরিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

দাপ্তরিক প্রতিবেদন লেখার নিয়ম হলো এ প্রতিবেদনে আপনি কোনো প্রতিষ্ঠানের যে কর্তৃপক্ষের বরাবর প্রতিবেদন লিখছেন তা শুরুতে উল্লেখ করতে হয়। তারপর পর্যায়ক্রমে প্রতিবেদনের বিষয়, শিরোনাম, ভুমিকা এবং মূল বিষয়বস্তু ছোট ছোট অনুচ্ছেদ আকারে তুলে ধরতে হয়।

উদাহরণঃ
তারিখঃ
বরাবর
কর্তৃপক্ষের পরিচয় (পদবি, প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা)
বিষয়ঃ

জনাব,
(এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রতিবেদনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরতে হবে)

প্রতিবেদকের নামঃ
ঠিকানাঃ

প্রতিবেদনের শিরোনামঃ

প্রতিবেদনের ভূমিকাঃ

মূল বিষয়বস্তুর বিবরণঃ

এগুলোই হলো সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম যা অনুসরণ করলে আপনারাও সুন্দরভাবে প্রতিবেদন লিখতে পারবেন।

প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা

প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে তো জেনে নিলেন। এবার আসা যাক প্রতিবেদন এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। বর্তমান যুগে প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

বিশেষ করে যেকোনো সমস্যায় নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দ্রুত আকর্ষণ করার জন্য একটি সঠিকভাবে লেখা প্রতিবেদনের কোনো বিকল্প নেই। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো সামাজিক সমস্যা কিংবা নির্দিষ্ট এলাকার কোনো সমস্যা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন লেখা হলে সেখান থেকে সমস্যাটির কোনো না কোনো সমাধান পাওয়া যায়।

এছাড়াও প্রতিবেদনের মাধ্যমে আমরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনা সম্পর্কে জানতে পারি। যা আমাদের জ্ঞান বাড়াতেও সহায়তা করে।

শুধু তাই নয়, সঠিকভাবে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম জানা থাকলে শুধুমাত্র শিক্ষাজীবনেই নয়, বরং কর্মক্ষেত্রেও যখন আপনাকে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হবে, তখন আপনি খুব সহজেই যেকোনো বিষয়ের উপর প্রতিবেদন তৈরি করে ফেলতে পারবেন। তাই বলা যেতে পারে আমাদের জীবনে প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি।

শেষ কথা

এটুকুই ছিল প্রতিবেদন নিয়ে , প্রতিবেদনের প্রকারভেদ, প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য, প্রতিবেদন লেখার নিয়ম এবং প্রতিবেদনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত আজকের বিস্তারিত আলোচনা। আশা করি প্রতিবেদন লেখা নিয়ে আপনাদের মনে যত রকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছিল সেগুলো দূর করতে সক্ষম হয়েছি।

যদি এ লেখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে, তাহলে নিজের বন্ধুবান্ধবের সাথে এই লেখাটি শেয়ার করুন এবং এমন আরও তথ্যবহুল লেখা পড়তে আমাদের সাথেই থাকুন।

 

About

Raqibul Mia

Pure Digital Marketing Specialist with more than 6 years of working experience. SEO | SMM | PPC | Email Marketing | Affiliate Marketing | Sales, for both Simplified and advanced Work

 

 

 

 

Leave a Comment

Item added to cart.
0 items - $0.00