মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে? মোবাইল আবিষ্কারের ইতিহাস

মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে জানুন!

আগে কখনো কি ভেবে দেখেছিলেন মোবাইলের মতো ছোট্ট একটি যন্ত্র আপনার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠবে?আবার কখনো কি প্রশ্ন জেগেছে মনে, মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে ?

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির দুনিয়ায় এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যার কাছে অন্তত একটি মোবাইল ফোন নেই । মাত্র কয়েকটি নাম্বার ডায়ালের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারি মোবাইল ফোন আবিষ্কারের পর থেকে। তবে সব থেকে অবাক করার মতো বিষয় হলো এইযে আমরা প্রতিদিন এত সময় ব্যয় করি মোবাইলের পেছনে, অথচ অনেকে এটি জানিনা যে কে আবিষ্কার করেছে।

তাহলে আর দেরি কেন? চলুন আজকের আর্টিকেলটি থেকে জেনে নেই মোবাইল আবিষ্কার সম্পর্কে সে সম্পর্কে বিস্তারিত। সাথে জানবো মোবাইল নিয়ে আরো কিছু তথ্য।

মোবাইল ফোন কি এবং কিভাবে কাজ করে

মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে সেটি তো জানাবোই, শুরুতেই মোবাইল নিয়ে একটু জানা যাক। মোবাইলকে আমরা বেশ কয়েকটি নামে জেনে থাকি, যেমন : সেলুলার ফোন, সেল ফোন, হ্যান্ডফোন, বা পকেট ফোন। এটি একটি বহনযোগ্য টেলিফোন ডিভাইস যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তথ্য আদান প্রদান করে থাকেন। আধুনিক মোবাইল ফোনের দেয়া পরিষেবা গুলো একটি বিশেষ ধরণের সেলুলার নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার ব্যবহার করে বলে মোবাইলকে উত্তর আমেরিকায় সেলুলার টেলিফোন বা সেলফোনও বলা হয়।

মোবাইল আবিষ্কারের পূর্বে আমাদের তথ্য আদান প্রদান করতে দিনের পর দিন অপেক্ষায় থাকতে হতো। মোবাইল আবিষ্কারের পর থেকে Cell phone, Featured Phone and Smart Phone, এই ৩ ধরনের ফোনের আবিষ্কার হয়েছে, যা আমাদের জীবনে যোগাযোগের পাশাপাশি আরো অনেক কাজকে সহজ করে দিয়েছে।

বর্তমানে মোবাইল ব্যবহার করার মাধ্যমে টেক্সট মেসেজিং, এমএমএস, ইমেইল, ইন্টারনেট অ্যাক্সেস, স্বল্প-পরিসরের বেতার যোগাযোগ ( ব্লুটুথ), ব্যবসার কাজ, ভিডিও গেম, ডিজিটাল ফটোগ্রাফি ইত্যাদি সকল ধরনের কাজ করা যায়।

কিভাবে মোবাইল ফোন আবিষ্কার হয়?

এখন অবশ্যই আপনাদের মাথায় ঘুরছে কিভাবে মোবাইল ফোন আবিষ্কার হলো ? আর দেরি না করে চলুন জেনে ফেলি সেটি সম্পর্কে।

আপনাদের সবারই নিশ্চয়ই মনে আছে মোবাইল আবিষ্কারের পূর্বে টেলিফোন সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হতো। টেলিফোনের মূল ফিচার ছিলো এটিকে আমরা একটি লম্বা তারের সাথে যুক্ত দেখতাম । সচরাচর এর ব্যবহার বেশি দেখা যেতো বিভিন্ন অফিস-আদালত এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

আরো জানুন: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি? কিভাবে কাজ করে?

মানুষের তখন সুযোগ ছিলোনা টেলিফোন সাথে নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার, যেটি ছিল অবাধ যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা। যোগাযোগ ব্যবস্থার সেই বড় বাধাকে দূর করার জন্য আজ থেকে ৫১ বছর আগে ১৯৭৩ সালের এপ্রিল মাসে নিউইয়র্কের হিলটন হোটেলে প্রথম মোবাইল ফোনের মডেল উপস্থাপন করা হয়।

প্রথম অবস্থায় মোবাইল ফোনটি দেখতে ছিলো ১০ ইঞ্চির মতো লম্বা আর ২ ইঞ্চি চওড়া। প্রথম ডিজাইন করা ফোনটি ছিলো ৪ ইঞ্চি মোটা। এটির ওজন ছিলো এক কেজিরও বেশি। তবে এই ফোনের মূল সমস্যা ছিলো মাত্র ২০ মিনিট কথা বললেই সেই ফোনের ব্যাটারি শেষ হয়ে যেত।

সাথে জেনে রাখা ভালো, এই মোবাইল ফোনটির সূচনা হয়েছিলো এটি অ্যান্ড টি (AT&T) কর্তৃক আবিষ্কৃত সেলুলার টেকনোলজি থেকে।

মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে?

এখন অবশ্যই আপনাদের জানার আগ্রহ জেগেছে মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে সেটি সম্পর্কে। ১৯৭৩ সালে টেলিফোন আবিষ্কারের পর থেকে সেটিকে বহনযোগ্য এবং আধুনিক কাজে ব্যবহার করার লক্ষ্যে যে ব্যক্তি ক্রমাগত কাজ করে গিয়েছিলেন তার নাম হলো মার্টিন কুপার। তিনিই সর্বপ্রথম মোবাইল আবিষ্কার করেন । তিনি মটোরোলা কোম্পানিতে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করতেন। সেই সময় মোবাইল ফোন আবিষ্কারের জন্য আরো বেশ কিছু অভিজ্ঞ মানুষ ও বিভিন্ন কোম্পানি চেষ্টা করলেও একমাত্র মার্টিন কুপারই সর্বপ্রথম সফলতার দেখা পান ।

মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে
মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে

মার্টিন কুপারের মাথায় মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ধারণাটি আসে আসেডিক ট্রেসি নামের আমেরিকান একটি কমিকে থাকা চরিত্রগুলো থেকে। সেই কমিকে কুপার লক্ষ্য করেন সেখানে একধরনের ভিডিও ঘড়ির সাহায্যে পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা হতো।

যোগাযোগের এই ধারণাটির রেশ ধরেই মার্টিন কুপারের নেতৃত্বে বিশ থেকে ত্রিশ জনের একটি দল ত্রিশ দিনের মধ্যেই মোবাইল ফোন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলো। কি দারুণ আবিষ্কার, তাইনা?

আশা করি আজকের পর থেকে মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে এই প্রশ্নটির উত্তর আর আপনাদের ভেবে বের করতে হবেনা।

মোবাইল ফোন দিয়ে প্রথম কল কে করেন?

এতক্ষণ আমরা জানলাম মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে তা সম্পর্কে। এখন বলুনতো মোবাইল ফোন দিয়ে প্রথম কে কল করেছেন? যদি ভেবে থাকেন প্রথম কলটি মার্টিন কুপার করেছেন, তাহলে আপনার ধারণা একদম সঠিক। মোবাইল ফোন দিয়ে প্রথম কলটি তিনি নিউইয়র্কের ৬ নং অ্যাভিনিউতে হাঁটতে হাঁটতে এ.টি অ্যান্ড টি (AT&T) কোম্পানিতে কর্মরত তার এক ইঞ্জিনিয়ার বন্ধুকে করেছিলেন।

মার্টিন কুপারের এই তারবিহীন যোগাযোগ ব্যবস্থার আবিষ্কারই আজ আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে এনে দিয়েছে একদম হাতের মুঠোয়। কারণ এখন যেকোনো সময় আমরা ঘরে বসে অথবা বাইরে গিয়ে মোবাইলে কল অথবা টেক্সট মেসেজ সেন্ড করার মাধ্যমে একে অপরের সাথে তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি।

প্রথম মোবাইল ফোন বাজারে আনে কোন কোম্পানি?

মটোরোলা ডাইনা টিএসি (DynaTAC) মডেলের ফোনটি ১৯৮৩ সালে প্রথমবারের মতো বাজারে আসে
মটোরোলা কোম্পানির হাত ধরে। যদিও তৎকালীন সময়কালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিকম কোম্পানি এ.টি অ্যান্ড টি মোবাইল প্রযুক্তির উদ্ভাবন করেছিলো, তবে সেটি ছিলো মূলত গাড়িতে টেলিফোন সংযুক্ত করার জন্য। সত্যি বলতে তারা হাতে করে একটি ফোন নিয়ে ঘোরার কথা মোটেও ভাবেনি। আর এই সু্যোগকে কাজে লাগিয়েই মূলত প্রথমবারের মতো মোবাইল ফোন বাজারে আনে মটোরোলা কোম্পানি।

মোবাইল ফোনের বর্তমান অবস্থা

মার্টিন কুপারের মোবাইল ফোন আবিষ্কারের ফলে বর্তমানে বিশ্বে কত মানুষ মোবাইল ইউজ করছে সে সংখ্যাটি কি জানেন?

ইন্টারনেট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বর্তমানে প্রায় ৭.১ বিলিয়ন বিলিয়নেরও বেশি মানুষ নিয়মিতভাবে মোবাইল ব্যবহার করছেন। সে হিসেবে বর্তমান পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ৮৭ শতাংশের বেশি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।

মোবাইল দিয়ে কল করার পাশাপাশি এখন কম বেশি সবাই ইন্টারনেট ব্রাউজিং করেন। আগে মানুষ গান শুনতে বা ভিডিও দেখতে অডিও- ভিডিও প্লেয়ারের সাহায্য নিলেও বর্তমানে মোবাইল থেকেই তা করে থাকেন। এছাড়াও বিভিন্ন ধরণের গেমস খেলা থেকে শুরু করে অফিসিয়াল কাজও মানুষ যেকোনো স্থান থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে সম্পন্ন করেন। পাশাপাশি ম্যাপ দেখে কোনো স্থানে যাওয়া-আসার কাজটিও এখন মোবাইল ফোন থেকে করা যায়।

মোবাইল নিয়ে কিছু তথ্য

মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে এবং কিভাবে এটি আবিষ্কার হলো তা জানার পর আপনাদের অবশ্যই ইচ্ছা করছে মোবাইল সম্পর্কে আরেকটু জানতে। চলুন এবার আরো কিছু তথ্য জেনে আসা যাক।

  • বিশ্বে থাকা মোবাইলের মধ্যে ৭০ পারসেন্ট মোবাইল ফোনই তৈরি হয় চীনে।
  • মোবাইল ফোন ছোঁড়া ফিনল্যান্ডের একটি জনপ্রিয় খেলা।
  • ৬৫% স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা তাদের ফোনে সুযোগ থাকলেও কোনো প্রকার অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করেন না।
  • বর্তমানে আপনি প্রতিদিন যে মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করছেন সেটি মহাকাশচারীদের কম্পিউটারের থেকেও বেশি কার্যকরী।
  • মোবাইল হারিয়ে ফেলার ভয়কে বলা হয়ে থাকে নোমোফোবিয়া৷
  • টয়লেটে থাকা হাতলের চাইতেও বেশি পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া থাকে মোবাইল ফোনে।
  • বিশ্বের সবচেয়ে শক্তপোক্ত মোবাইল ফোন হলো সনিম এক্সপি ৩৩০০ ফোর্স যেটি ৮৪ ফুট উঁচু থেকে পড়ার পরেও একদম অক্ষত ছিল । ফলে পরবর্তীতে স্বাভাবিকভাবেই ফোনটি জায়গা করে নেয় গিনেস বুকে রেকর্ডে।

আপনার জন্য: সঠিক ভাবে ফেসবুক আইডি খোলার নিয়ম সম্পর্কে জানুন

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনাদের মোবাইল সম্পর্কে ও মোবাইল কে আবিষ্কার করেছে সেটি সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করেছি। আশা করি এখন আপনাকে এই প্রশ্নটি করলে আপনি সবার আগে উত্তরটি দিতে পারবেন। এমন আরো আর্টিকেল পড়তে চাইলে আমাদের সাথেই থাকুন।

Leave a Comment