ব্লগ পোস্ট

কম্পিউটারের জনক কে? কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেন?

Raqib4you

কম্পিউটারের নাম শোনেননি এমন কেউ আমাদের আশেপাশে নেই। যদি বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির কয়েকটি অনবদ্য আবিষ্কার নিয়ে বলতে যাই যেগুলো আমাদের জীবনধারা পাল্টে দিয়েছে, তাহলে যেটির নাম শুরুর দিকে থাকবে সেটি হলো কম্পিউটার। আধুনিক যুগে আমাদের সময় ও শ্রম বাঁচাতে কম্পিউটারের কোনো বিকল্প নেই। আচ্ছা আপনাদের কি জানতে ইচ্ছা করে না যে কম্পিউটারের জনক কে? যদি এ প্রশ্নটির উত্তর হ্যাঁ হয়ে থাকে, তাহলে এই লেখাটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ার অনুরোধ করছি। কারণ আজকের লেখায় আলোচনা করবো কম্পিউটার কি ও কম্পিউটার কে আবিষ্কার করেছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত। 

কম্পিউটার কি?

কম্পিউটারের জনক কে সেটি তো জানাবোই, তার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক কম্পিউটার কি সে সম্পর্কে। কম্পিউটার হলো একটি ইলেকট্রনিক ডিভাইস যার মাধ্যমে বিভিন্ন ডেটা কিংবা ইনফরমেশন ইনপুট করার পর সেটি প্রসেসিং করা যায়। শুধু তাই নয়, এমন একটি যন্ত্র যেটি দিয়ে যেকোনো ডেটা খুব সহজে সংরক্ষণও করা যায়।

কম্পিউটারের জনক কে
কম্পিউটারের জনক কে

কম্পিউটারকে বলা হয়ে থাকে বিজ্ঞানের সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার। কম্পিউটার নামটির উৎপত্তি হয়েছে গ্রিক শব্দ কম্পিউট থেকে। কম্পিউট শব্দটির অর্থ হল গোনা কিংবা যেটিকে শুদ্ধ বাংলায় গণনা করাও বলা হয়। শুরুর দিকে কম্পিউটারকে কেবলমাত্র গণনাকারী যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এখন এমন কোনো কাজ নেই যেটি কম্পিউটারের মাধ্যমে করা যায় না। 

যদি একটু ঘাঁটাঘাটি করা যায় তাহলে দেখা যাবে আবিষ্কারের সময় থেকে এখন পর্যন্ত বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার রয়েছে। যেমনঃ প্রাচীনকালের কম্পিউটার আধুনিক কম্পিউটার, পারসোনাল কম্পিউটার, সুপার কম্পিউটার কিংবা ডিজিটাল কম্পিউটার ইত্যাদি। 

কম্পিউটারে কি কি অংশ রয়েছে?

যেকোনো কম্পিউটারে মূলত দুটি অংশ বিদ্যমান রয়েছে, যেগুলো হলো হার্ডওয়ার এবং সফটওয়্যার। কম্পিউটারের যে অংশ চোখে দেখা ও স্পর্শ করা যায় সেটিকে হার্ডওয়ার বলা হয়। হার্ডওয়্যার এর উদাহরণ হচ্ছে কিবোর্ড, মাউস, স্ক্রিন ইত্যাদি। এর পাশাপাশি একটি কম্পিউটার যে সমস্ত অংশ নিয়ে গঠিত সেগুলোকেও হার্ডওয়ার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। 

তবে শুধুমাত্র হার্ডওয়ারের সাহায্যে কিন্তু কম্পিউটারে কোনো কাজ করা যায় না। 

কম্পিউটারের হার্ডওয়ারগুলোর সাহায্যে যেকোনো কাজ করতে প্রয়োজন সফটওয়্যার। সফটওয়্যার হলো এক সেট ইনস্ট্রাকশন যেগুলো কাজের ধরণভেদে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। বর্তমানে কম্পিউটারে বিভিন্ন রকমের সফটওয়্যার দেখতে পাওয়া যায়। যেমনঃ ইন্টারনেট ব্রাউজ করার জন্য ওয়েব ব্রাউজার, বিভিন্ন ডকুমেন্ট টাইপ করার জন্য মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, প্রেজেন্টেশন বানানোর জন্য পাওয়ার পয়েন্ট, ছবি এডিটিং ও ডিজাইন করার জন্য ফটোশপ ইত্যাদি। 

সফটওয়্যারের ইনস্ট্রাকশন ফলো করে সে অনুযায়ী হার্ডওয়্যারগুলো অপারেট করে থাকে। তাই বলা যেতে পারে হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার এ দুটির পারফেক্ট কম্বিনেশনে একটি কম্পিউটার পরিচালিত হয়। যেমন ধরুন, অফিসের একটি প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি করতে আপনার প্রয়োজন হবে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, যেটি হলো একটি সফটওয়্যার এবং এ সফটওয়্যারটি ব্যবহার করে ডকুমেন্টটি তৈরি করার জন্য কিবোর্ড ও মাউসের সাহায্য নিতে হবে, যেগুলো হলো কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার। এভাবেই হার্ডওয়ার ও সফটওয়্যার দুটির সাহায্যে আমরা কম্পিউটার ব্যবহার করে আমাদের নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন কাজ সম্পন্ন করি। 

কম্পিউটারের জনক কে? 

এবার আসা যাক কম্পিউটারের জনক কে সে প্রশ্নের উত্তরে। যদি কম্পিউটার আবিষ্কারের একদম শুরুর দিকের সময়ের কথা হিসাব করতে যাই, সে হিসেবে একদম প্রথম কম্পিউটারটির আবিষ্কারক বলা যেতে পারে হাওয়ার্ড অ্যাইকন কে। 

তবে এক্ষেত্রে দুঃখের বিষয় হলো এ আবিষ্কারক সম্পর্কে ইতিহাসের পাতায় সেভাবে কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। তাই আমাদের এটি জানারও কোন উপায় নেই তিনি কোন ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিংবা কিভাবে প্রথম কম্পিউটারটি আবিষ্কার করেছিলেন। 

তারপর ১৮৩০ সালের দিকে বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ আবিষ্কার করেন প্রথম আধুনিক কম্পিউটার। আধুনিক কম্পিউটার এ কারণেই বলছি কারণ চার্লস ব্যাবেজ এর আবিষ্কার করা কম্পিউটারটি অন্য কোনো বুদ্ধিমত্তার সহযোগিতা ছাড়াই সঠিকভাবে গণনার কাজ করতে পারত। এই কম্পিউটারটি দিয়ে মূলত সংখ্যা ও সারণি গণনা করা যেত এবং এটিই ছিল এ কম্পিউটারের একমাত্র কাজ। 

বলা হয়ে থাকে চার্লস ব্যাবেজের আবিষ্কার করা এ কম্পিউটারটিই কম্পিউটারের গঠন কিংবা কাজ কেমন হতে পারে সে সম্পর্কে প্রথমবারের মতো পরিষ্কার একটি ধারণা দিতে সক্ষম হয়। এ কারণে কম্পিউটারের আবিষ্কারক কে সে প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলতে পারি কম্পিউটারের আবিষ্কারক চার্লস ব্যাবেজ, যার অসামান্য অবদানের ফলেই কম্পিউটার নামের একটি যন্ত্র আসলেই যে তৈরি হতে পারে সেটি নিয়ে মানুষ ভাবতে শুরু করেছিল। 

কম্পিউটারের বিকাশ 

ব্রিটিশ নাগরিক চার্লস ব্যাবেজের কম্পিউটার আবিষ্কারের পর থেকেই মানুষ গবেষণা করতে শুরু করে যে কিভাবে আরো আধুনিক এবং আরো কাজ করতে সক্ষম কম্পিউটার তৈরি করা যেতে পারে। তারপর ১৯৭১ সালে যখন মাইক্রো প্রসেসরের উদ্ভব হয়, তখন থেকে এই মাইক্রো প্রসেসর কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারের গঠন ও কার্যকারিতায় আরো উন্নতি আসতে শুরু করে। 

মাইক্রো প্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার সবার জন্য বাজারে প্রথমবার নিয়ে আসে ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে। তার ঠিক দশ বছর পর অর্থাৎ ১৯৮১ সালে আইবিএম নিয়ে আসে সবার জন্য পিসি যেটিকে পার্সোনাল কম্পিউটারও ডাকা হয়। বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা সবার বাজেট ও চাহিদার কথা মাথায় রেখে নানা রকম আকৃতি ও কার্যকারিতা বিশিষ্ট কম্পিউটার তৈরি করে। 

মাথায় রাখুনঃ 

লেখার এ পর্যায়ে এসে অনেকেই কনফিউজড হয়ে যেতে পারেন যে তাহলে কম্পিউটারের জনক কে সেটি জিজ্ঞেস করা হলে তারা কি উত্তর দেবেন৷ তাদের জন্য বলছি,

  •  সর্বপ্রথম যে কম্পিউটারটি আবিষ্কার করা হয়েছিলো সেটির জনক হলেন হাওয়ার্ড অ্যাইকন। 
  • আধুনিক কম্পিউটারের জনক হলেন চার্লস ব্যাবেজ। বেশিরভাগ স্থানে চার্লস ব্যাবেজকেই কম্পিউটারের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয় কারণ তারা আবিষ্কারের ভিত্তি ধরেই এখনকার যুগের সব কম্পিউটার আবিষ্কার করা সম্ভব হয়েছে। 
  • এছাড়াও জেনে রাখুন, ডিজিটাল কম্পিউটারের জনক হলেন জন ভন নিউম্যান। 
  •  সুপার কম্পিউটারের জনক হলেন সেইমার ক্রে। 

আশা করি এখন আপনারা বুঝতে পেরেছেন। 

কম্পিউটারের কেন ব্যবহার করবেন? 

কম্পিউটারের মাধ্যমে যেকোনো কাজ খুব দ্রুত নির্ভুলভাবে করে ফেলা যায়। আপনি কোন একটি গাণিতিক গণনা করতে চান অথবা প্রোগ্রামিং সম্পর্কিত কোনো কাজ- কম্পিউটারের সাহায্য নিলে সেটি যেমন কম সময় করতে পারবেন, তেমনি একদম নির্ভুল আউটপুট পাবেন।

কম্পিউটার ব্যবহার করে নিজেদের পড়াশোনা কিংবা কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন কাজও খুব সহজেই করে ফেলা যায়। যেমনঃ বিভিন্ন ডকুমেন্ট তৈরি, গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রেজেন্টেশন তৈরি, মাইক্রোসফট এক্সেল ব্যবহার করে বিভিন্ন লিস্ট তৈরি, প্রয়োজনীয় ইমেইল সেন্ড করা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ইত্যাদি তো করা যায়ই, পাশাপাশি অবসর সময়ে বিনোদনের জন্য কম্পিউটারে গান শোনা, মুভি দেখা,গেইম খেলা ছবি আঁকা ইত্যাদি কাজও খুব সহজে করে ফেলা যায়। 

শুধু তাই নয়, নিরাপত্তা জনিত বিভিন্ন কাজ যেমন  সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে কোন এলাকা নিয়ন্ত্রণ, কিংবা সবার তথ্য দিয়ে ডেটাবেজ তৈরি ইত্যাদি কাজও কম্পিউটারের সাহায্যে করা হয়। তাই এটি নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে, আমাদের বাসা বাড়ি হোক কিংবা কোনো বড় প্রতিষ্ঠান, সব জায়গাতেই কম্পিউটারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।

এটুকুই ছিল কম্পিউটারের জনক কে সে সম্পর্কিত আমাদের আজকের আলোচনা।  আশা করছি কম্পিউটার সম্পর্ক আপনারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনেছেন এবং এই তথ্যগুলো আপনাদের কাজে লাগবে।

 

About

Raqibul Mia

Pure Digital Marketing Specialist with more than 6 years of working experience. SEO | SMM | PPC | Email Marketing | Affiliate Marketing | Sales, for both Simplified and advanced Work