SEO Expert In Bangladesh | Raqibul Mia

নিজেদের বিভিন্ন কাজে প্রতিনিয়তই আমাদেরকে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলেও ইন্টারনেট মানে কি তা অনেকেই জানেননা। অনেকেই ভাবেন ইন্টারনেট মানে ওয়াইফাই, আবার অনেকেই মনে করেন গুগলকেই ইন্টারনেট বলে। অথচ ইন্টারনেট ছাড়া আমরা একদিনও চলতে পারিনা। বর্তমান সময়ে কাজ ও পড়াশোনার পাশাপাশি সবার সাথে যোগাযোগ করতে ও আমাদের অবসর সময়ে আনন্দের খোরাক জোগাতেও ইন্টারনেটের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। 

বলা যেতে পারে আমাদের জীবনযাত্রা সহজ করতে এবং কম সময়ে অনেক কাজ সম্পন্ন করতে ইন্টারনেট প্রতিনিয়তই অবদান রেখে চলেছে। তাই আজকের লেখায় আমরা জানবো ইন্টারনেট মানে কি, ইন্টারনেট কি কি কাজে ব্যবহার করা যায় এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু সতকর্তা সম্পর্কে বিস্তারিত। 

ইন্টারনেট মানে কি? 

ইন্টারনেটের পূর্ণরূপ হচ্ছে ইন্টার কানেক্টেড নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির এক অনবদ্য আবিষ্কার যা আমাদের গোটা পৃথিবীর সাথে সংযুক্ত করেছে। আমাদের নিত্যদিনকার ছোট-বড় অনেক কাজেই আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হয়। এমনকি এই যে আপনারা এই আর্টিকেলটি পড়ছেন, এই আর্টিকেলটিও কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমেই পড়তে পারছেন। তাই চলুন শুরুতেই জেনে নেয়া যাক ইন্টারনেট মানে কি বোঝানো হয়। 

ইন্টারনেট হলো এমন একটি নেটওয়ার্ক যার পরিধি গোটা বিশ্বব্যাপী। বিস্তৃত এই নেটওয়ার্কটি গঠিত হয়েছে কোটি কোটি কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিক ডিভাইসের সংযুক্তির মাধ্যমে। এখন আপনারা নিশ্চয়ই জানতে চাইবেন কিভাবে এত কম্পিউটার একসাথে যুক্ত থাকে? এ উত্তরটিও দিয়ে দিচ্ছি। আইপি অ্যাড্রেস বা প্রোটোকল নামক এক সেট ইউনিক নাম্বার বা অ্যাড্রেসের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন বিল্ড আপ করা হয়৷ আশা করি ইন্টারনেট মানে কি তা এখন বুঝতে পেরেছেন৷ 

ইন্টারনেট আবিষ্কারের ইতিহাস 

ইন্টারনেট সর্বপ্রথম আবিষ্কার করা হয় ১৯৬৯ সালের দিকে। তখন অবশ্য এটিকে ইন্টারনেট বলা হতোনা, অ্যারপানেট বলা হতো। তবে এটি দিয়ে এখনকার দিনের মতো অনেক কম্পিউটারের মধ্যে কানেকশন তৈরি করা যেতোনা। তারপর ধীরে ধীরে ইন্টারনেট নিয়ে গবেষণা শুরু হয় এবং এটির উন্নতি বাড়তে থাকে। তারপর ১৯৮৯ সালে টিম বার্নাস লির হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব ও এইচটিটিপি, মূলত তারপরেই ইন্টারনেটের সাহায্যে অনলাইন নেটওয়ার্কের আওতায় তথ্য কিংবা ডেটা আদান প্রদান বাড়া শুরু হয়। 

তবে এক্ষেত্রে জেনে রাখা ভালো, অনেকেই ইন্টারনেট ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব দুটিকে একই মনে করেন। কিন্তু এ দুটি মোটেও এক নয়। ইন্টারনেট হচ্ছে মূলত অনেকগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে তৈরি একটি গ্লোবাল নেটওয়ার্ক এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হলো প্রকৃতপক্ষে ইন্টারনেটের একটি অংশ। সহজ ভাষায় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হলো ইন্টারনেটে অ্যাভেইলেবল সমস্ত ওয়েব পেইজের কালেকশন। 

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবে থাকা হাইপারটেক্সট লিংকের সাহায্যে ইন্টারনেটে অ্যাভেইলেবল বিভিন্ন ডকুমেন্ট ও ফাইল পরস্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যাতে করে কেউ যখন সার্চ করেন, তখন তিনি সেগুলো খুজে পেতে সক্ষম হন। যখন একজন ইউজার ইন্টারনেটে কোনো তথ্য কিংবা ডেটা সম্পর্কে সার্চ করেন, তখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবই সে ইউজারকে ওই ডেটা দেখার পারমিশন প্রোভাইড করে। 

কিভাবে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হতে হয়?

ইন্টারনেটের মাধ্যমে কোন তথ্য কিংবা ডেটা খুঁজে পেতে অথবা কারো সাথে কমিউনিকেট করার জন্য শুরুতেই প্রয়োজন ইন্টারনেট কানেকশন সাপোর্ট করে এমন একটি ডিভাইস। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস যেমনঃ মোবাইল ফোন, ট্যাব, আইপ্যাড, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্ট টিভি ইত্যাদিতে ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করা যায়। তাই যদি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান তাহলে এ ধরনের গ্যাজেট গুলোর অন্তত একটি থাকতে হবে। 

তারপর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের কাছ থেকে ইন্টারনেট কানেকশন দিতে হয়। উইথ ওয়্যার কিংবা ওয়্যারলেস দু’ভাবেই ইন্টারনেট কানেকশন নেয়ার সুবিধা থাকে। এই ইন্টারনেট কানেকশন নেয়ার পর নিজের ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সেটি কানেক্ট করে দেয়ার পরেই একজন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সক্ষম হন। 

যদি ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান, তাহলে অবশ্যই যেকোনো একটি ওয়েব ব্রাউজার থাকতে হবে। বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়েব ব্রাউজার গুলো হচ্ছে গুগল ক্রোম, মোজিলা ফায়ারফক্স ইত্যাদি। আবার যদি স্মার্ট ফোন কিংবা ট্যাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে চান তাহলে ওয়েব ব্রাউজারের পাশাপাশি বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশন যেমনঃ ফেসবুক, মেসেঞ্জার, টুইটার ইত্যাদি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমেও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন। 

ইন্টারনেটের কিছু ব্যবহার সম্পর্কে জানুন 

ইন্টারনেট মানে কি তা তো জেনে নিলেন। চলুন এবার জেনে নেয়া যাক ইন্টারনেটের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার সম্পর্কে। ইন্টারনেটের সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হল যোগাযোগ। বর্তমানে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে থাকা আমাদের পরিবার বা বন্ধু বান্ধবের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করা যায় ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইমো, স্কাইপ ইত্যাদির মাধ্যমে। ইন্টারনেটের ফলে দূরত্ব এখন আমাদের কাছে যোগাযোগের জন্য কোনো বাধাই নয়। 

ইন্টারনেটের কারণে এখন পড়াশোনা করাও অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে। পড়তে গেলে একটি টপিক বুঝতে সমস্যা হলে অথবা নতুন কিছু জানার উদ্দেশ্যে মানুষ এখন সাহায্য নেয় গুগল কিংবা ইউটিউবের। একই সাথে ইন্টারনেটে অ্যাভেইলেবল থাকা বিভিন্ন অনলাইন কোর্স করার মাধ্যমেও মানুষ এখন অনেক কিছু শিখতে পারছে। শুধু তাই নয়, এখন দেশের বাইরের কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাপ্লাই করার কাজটিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যায়। এটি নিঃসন্দেহে আমাদের সময় অনেকটুকু বাঁচিয়ে দিয়েছে। 

আমাদের কর্মজীবনও ইন্টারনেট বেশ সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে গুগল ওয়ার্কস্পেস, আউটলুক, মেটা ওয়ার্কপ্লেস ইত্যাদি ব্যবহার করার মাধ্যমে একই অফিসে কাজ করা সহকর্মীরা একে অপরের সাথে কানেক্টেড থাকতে পারছেন এবং এতে করে অফিসের কাজ এবং মিটিং ইত্যাদি অনেক সহজে সম্পন্ন করা যাচ্ছে। 

শুধু যে অফিসের কাজ করা যাচ্ছে এমন নয়, বরং এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে মানুষ তার নিজের বাড়িতে বসেই অর্থ উপার্জন করতে পারছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হলো ফ্রিল্যান্সিং। বিভিন্ন অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সাইট যেমন আপওয়ার্ক, ফাইভার ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষ এখন বাড়িতে বসেই উপার্জন করছে। এছাড়াও ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিভিন্ন রিমোট জব ও অনলাইন বিজনেসের মাধ্যমেও মানুষ এখন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে। 

ইন্টারনেটের কারণে বর্তমানে অনলাইন ব্যাংকিং ও ট্রানজেকশন এর সুবিধা থাকায় মানুষ বাড়িতে বসে  প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো কিনতে পারছে। শুধুমাত্র যে দেশেই ট্রানজেকশন করা যায় এমন নয়, বর্তমানে খুব সহজেই বিদেশ থেকে দেশে টাকা পাঠানো সম্ভব। 

ইন্টারনেটের কারণে আমাদের অবসর সময়ও এখন হয়ে উঠেছে আনন্দমুখর। ইউটিউবের ভিডিও, নেটফ্লিক্স, হইচই ইত্যাদির মতো স্ট্রিমিং সাইট কিংবা অনলাইন গেমস এগুলোর বদৌলতে এখন আমাদের অবসর সময় কাটে আনন্দ ও খুশিতে। 

ইন্টারনেট ব্যবহারে কিছু সতকর্তা 

ইন্টারনেটের কিছু ব্যবহার তো জেনে নিলেন। এখন আমি আপনাদের জানাবো ইন্টারনেট ব্যবহারের কিছু সতর্কতা সম্পর্কে। এগুলো জানা থাকলে ইন্টারনেট ব্যবহার করা আপনাদের জন্য অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়ে যাবে। 

ইন্টারনেট ব্যবহারের সতর্কতা হিসেবে আমি শুরুতেই বলবো ইন্টারনেট থেকে কোন ফাইল ডাউনলোড করার সময় অবশ্যই সতর্ক থাকুন। অনেক সময় আমাদের বিভিন্ন সফটওয়্যার কিংবা ফাইল ডাউনলোড করার প্রয়োজন হয়। ইন্টারনেটে থাকা  ওয়েবসাইট থেকে যখন এগুলো ডাউনলোড করতে যাবেন, তার আগে একটু রিসার্চ করে নিন যে এই সাইটগুলো ফাইল ডাউনলোড করার জন্য নিরাপদ কিনা।  

অনেক সময় অনেক ওয়েবসাইটে কোন ফাইল ডাউনলোড করার পর সে ফাইলের মাধ্যমে আমাদের কম্পিউটারে ভাইরাস কিংবা মালওয়্যারের আক্রমণ ঘটে। আক্রমণের ফলে আমাদের কম্পিউটার কিংবা ফোনে থাকা সব ডেটা ডিলিট হয়ে যেতে পারে, এমনকি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ইনফরমেশনও হ্যাকারদের হাতে চলে যেতে পারে। তাই সব সময় নির্ভরযোগ্য সাইট থেকে ফাইল ডাউনলোড করার চেষ্টা করুন।  আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে আপনার কম্পিউটার কিংবা ফোনে একটি ভালো অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করে রাখা।এতে করে নিরাপদে ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারবেন। 

ইন্টারনেটে টাকা-পয়সা ট্রানজেকশনের সময় সব সময় সতর্ক থাকুন। অনেক সময় কোন আনঅথোরাইজড সাইটে যদি অনলাইন পেমেন্ট করেন, তাহলে সেখান থেকে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়ার পসিবিলিটি থাকে। তাই ইন্টারনেটে কোথাও না বুঝে টাকা-পয়সা আদান-প্রদান করা যাবে না।

ইন্টারনেটের যেকোনো ওয়েবসাইটে নিজের ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করা থেকে বিরত থাকুন।  যদি কোথাও ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতেই হয় তাহলে তার আগে গুগলে সার্চ করে নিশ্চিত হয়ে নিন যে সেই সাইটটি ব্যক্তিগত তথ্য প্রদানের জন্য নিরাপদ কিনা। 

এটুকুই ছিল ইন্টারনেট মানে কি, ইন্টারনেটের ব্যবহার এবং ইন্টারনেট ব্যবহারে সর্তকতা সম্পর্কে আমাদের আজকের আলোচনা।  লেখার শেষে সবাইকে এটুকুই বলবো ইন্টারনেট আমাদের জন্য আশীর্বাদের মতো হলেও সব সময় চেষ্টা করবেন এটির পরিমিত ব্যবহার করতে।  যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে নিজের পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে এটি শেয়ার করতে ভুলবেন না।